মাছ চাষের ব্যবসা কীভাবে শুরু করতে হয় | Fish farming Business in Bengali 2022

বর্তমান সময়ে মাছ চাষের ব্যবসা করা লাভ দায়ক বলে বিবেচিত হচ্ছে। কেননা আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক মাছ খেতে পছন্দ করে তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ বাঙালি হওয়ায় আমরা মাছ ভাত খেতে খুব পছন্দ করি। মাছ চাষ কে ইংরেজিতে ফিশ ফার্মিং বলা হয়। মাছ চাষ করার জন্য নদী বা সমুদ্র থাকা জরুরী এমন কিন্তু না। আপনি আপনার কোন একটি জায়গায় ট্যাংকার এর সাহায্যে বা পুকুর বানিয়ে খুব সহজেই মাছ চাষ করতে পারেন। আজকে আপনি মাছ চাষের সঠিক পদ্ধতি এবং তা থেকে কত পরিমান লাভ করা যায় জানতে পারবেন।

Fish farming Business in Bengali 2022

Fish farming Business in Bengali

মাছ চাষ কেন করবেন?

শুধুমাত্র আমাদের পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতবর্ষেই নয় সারা বিশ্বে মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া মাছ খুবই সুস্বাদু, প্রোটিন এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ। যার কারণে সারা বিশ্বে এর বাজার বেড়েই চলেছে। এখন শুধুমাত্র নদী বা সমুদ্রের উপর এই মাছ চাষের জন্য নির্ভর থাকতে হচ্ছে না। প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে প্রাকৃতিক উপায়ে ট্যাংকার বানিয়ে বানিয়ে তাতে খুব সহজেই মাছ চাষ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ লাভ করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন লোকেরা নিজের মাছের ফার্ম খুলে মাছ চাষ করছে এবং প্রচুর মুনাফা অর্জন করছে।

ফিশ ফার্মিং কি?

ফিশ ফার্মিং এর মানে হচ্ছে কোন একটি জায়গায় ছোট মাছের চাষ করে বা পালন করে সেগুলির আকার বৃদ্ধি করা এবং পরবর্তীতে সেগুলি বাজারে বিক্রি করা। আপনাদের জানিয়ে রাখি, ফিশ ফার্মিং- এ খুবই অল্প টাকা বিনিয়োগ করে প্রচুর লাভ করা সম্ভব।

মাছ চাষের প্রক্রিয়া

মাছ চাষের জন্য প্রথমে ট্যাংক বা পুকুরের নির্মাণ করতে হবে। আর এর জন্য আপনার দরকার হবে একটা ফাঁকা জায়গা। অর্থাৎ সর্বপ্রথমেই মাছ গুলি রাখার জায়গা নির্বাচন করতে হবে। মাছ চাষের প্রক্রিয়া নীচে দেওয় হল- 

১.মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত স্থান

মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত স্থান বা জায়গা নির্বাচন করা আবশ্যক। আবহাওয়া মাছ চাষের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব ফেলে থাকে। আপনাদের জানিয়ে রাখি শীতকালে মাছের বৃদ্ধির প্রক্রিয়া খুবই ধীর গতিতে সম্পন্ন হয়। তাই চেষ্টা করতে হবে শীতকাল এর মধ্যেই মাছ চাষের সমস্ত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় এবং গরম এর শুরুতে মাছ চাষ শুরু হয়ে যায়।

২. মাছ চাষের জন্য ট্যাংক বা পুকুরের নির্মাণ

মাছ চাষের জন্য আপনি বিভিন্নভাবে ট্যাংক বা পুকুর  তৈরি করতে পারেন। যদি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে মাছ চাষ শুরু করতে চান তাহলে প্লাস্টিকের বড় ট্যাংক কিনতে পারেন। আর আপনি যদি কোন জায়গায় অর্থাৎ মাটিতে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করতে চান তাও করতে পারেন। এমনকি ছাদের ফাঁকা জায়গাতেও প্লাস্টিকের ট্যাংক এর সাহায্যে খুব সহজেই মাছ চাষ করা যেতে পারে। মাটিতে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে ব্লিচিং পাউডার এবং চুন ঐ পুকুরের উপর ছিটিয়ে দিতে হবে যাতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলি মারা যায়।

৩. মাছের জন্য খাবারের ব্যবস্থা

মাছগুলোকে জীবিত রেখে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য এবং মাছের আকার বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত খাবার দেওয়া প্রয়োজন। তাই অগ্রিম ভাবে মাছের খাবারের বন্দোবস্ত করতে হবে। তাছাড়া মাছেদের প্রজাতির উপর ভিত্তি করেই তাদের খাবার নির্বাচন করা আবশ্যক। সেই সঙ্গে সঙ্গে পুকুরে বা ট্যাংকের জল যাতে মাছেদের জন্য উপযুক্ত হয় সেটা নিশ্চিত করেই মাছের ছোট চারা গুলিকে জলে রাখতে হবে।

৪. বিভিন্ন প্রজাতির মাছ

মাছ চাষের ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে লাভ করার জন্য সঠিক মাছের নির্বাচন করা খুবই জরুরী। মাগুর, পাবদা, চিংড়ি, তেলাপিয়া, রুই, কাতলা ইত্যাদি প্রজাতির মাছ চাষ করলে অধিক লাভ করা সম্ভব হয়। এরমধ্যে তেলাপিয়া মাছ যেকোনো পরিবেশেই চাষ করা যেতে পারে। আবহাওয়া এবং পরিবেশের মানানসই মাছ চাষ করলে বেশি মুনাফা অর্জন করা যেতে পারে।

৫. জলের গুণগত মান বজায় রাখা

পুকুর বা ট্যাংকের জল যাতে মাছ চাষের পক্ষে অনুকূল হয় সেটা দেখতে হবে। তাই মাসে একবার বা দু’বার পুকুর বা ট্যাঙ্কারের জল পরিষ্কার করে নিতে হবে। সঙ্গে এটাও দেখতে হবে যে জলের পিএইচ মাত্রা যাতে 7 থেকে 8 এর মধ্যে থাকে। এমনটা করলে মাছ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জল পাবে আর আপনি পাবেন আরো বেশী মাছের উৎপাদন।

মাছ চাষের বিভিন্ন উপায়

আপনি বিভিন্ন উপায়ে মাছ চাষ করতে পারেন মাছ চাষের বিভিন্ন উপায় গুলি নিচে বর্ণনা করা হলো-

১. কেজ সিস্টেম

এই পদ্ধতিতে নদী খাল এবং সমুদ্রে মাছ চাষ করা হয়। অর্থাৎ সম্পূর্ণ ব্যবসা কোন নদী বা সমুদ্রের জলেই করা হয়। এই ধরনের মাছের ব্যবসা খুবই সহজ এবং লাভ দায়ক। যাতে খুব কম পরিমাণ টাকা ইনভেস্ট করতে হয়। নদী-খাল বা সমুদ্রে জাল বিছিয়ে এই ধরনের চাষ করা হয়।

২. পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ

পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করা সবথেকে বেশি উপকারী। এই পদ্ধতিতে আপনাকে কোনো একটি জায়গায় পুকুর বানিয়ে বা পুরোনো কোন পুকুরে মাছ চাষ শুরু করতে হবে। যদিও এর দেখাশোনা করার জন্য একটু বেশি খরচ হয় এবং পরিশ্রমও একটু বেশি লাগে। কিন্তু এ থেকে টাকা বেশি লাভ করতে পারবেন।

৩. ঘর বা ভিতরে কোনো জায়গায় মাছ চাষ

বর্তমানের আধুনিক প্রযুক্তির সময়ে ঘর বা কোন ভিতরের জায়গায় সহজেই মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। এর জন্য আপনাকে মাছের থাকার উপযুক্ত পরিবেশ বানিয়ে নিতে হবে। ঘরের মধ্যে এমন কিছু যন্ত্রের ব্যবহার করতে হবে যাতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলেও ভালো টাকা লাভ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে আলো এবং জলের যাতে ভালো সুবিধা থাকে সে বিষয়েও নজর রাখতে হবে।

মাছ চাষ করার লাভ

বর্তমান সময়ে মাছ চাষের ব্যবসা খুব দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ব্যবসা করে ভালো টাকা প্রতি বছর ইনকাম করা সম্ভব। শুধু তাই নয় আপনি আপনার উৎপাদিত মাছ অন্য কোন রাজ্যে বা দেশে রপ্তানি করেও ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

মাছ চাষের ক্ষেত্রে খুব অল্প টাকা বিনিয়োগ করে প্রচুর লাভ করা সম্ভব হয়। তাছাড়া আমাদের দেশ এবং  রাজ্যে নদী এবং পুকুর প্রচুর পরিমাণে থাকায় এই ব্যবসায় লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

মাছ বিক্রির জন্য মার্কেটিং

যেকোনো জায়গায় খুব সহজেই মাছ বিক্রির জন্য বাজার উপলব্ধ আছে। আপনি আপনার চাষ করা মাছ খুব সহজেই মাছের আরত বা মাছ বিক্রেতাদের বিক্রি করতে পারেন। তাছাড়া নিকটবর্তী কোন হোটেল বা দোকানদারদের সঙ্গে সরাসরি মাছ বিক্রি করতে পারেন।

মাছ চাষে টাকা বিনিয়োগ

25 থেকে 50 হাজার টাকার মধ্যে মাছের পুকুর তৈরি করা হয়ে যায়। সেইসঙ্গে মাছের চারা, খাবার, জল ও বিদ্যুতের বিল সহ মোট 1 থেকে দেড় লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। ব্যবসাটি যদি একটু বড় মাপের করা হয় তাহলে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। আপনি ছোট আকারের ব্যবসা শুরু করতে পারেন এর থেকেও কম খরচে।

মাছ চাষ থেকে লাভের পরিমাণ

আপনি যদি মাছ চাষে এক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন তাহলে কমপক্ষে তিন গুন লাভ হতে পারে। তাছাড়া মাছ চাষের ক্ষেত্রে লাভ আপনার কার্য ক্ষমতা, পরিশ্রম, মার্কেটিং সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ আপনি আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে কিরকম পরিশ্রম দিচ্ছেন তার ওপরে আপনার লাভ নির্ভর করবে।