ঘরে বসে টাকা ইনকাম, 6 উপায়ে ইনকাম করার সুযোগ

ঘরে বসে থেকে প্রতিদিন অল্প কিছু সময় কাজ করে যদি অতিরিক্ত কিছু টাকা ইনকাম করা যায় তাহলে কেমন হয়? অবশ্যই ভালো, তাই না। একজন ছাত্র বা ছাত্রী, গৃহবধূ, চাকরিজীবী বা যেকোনো কাজের সাথে যুক্ত ব্যাক্তি এমনকি বেকার যুবক যুবতীরাও চাইলে দিনের কিছু একটা সময় কাজ করে অতিরিক্ত টাকা উপার্জন করতে পারবে।

কিন্তু কিভাবে? আজকে আমরা ঘরে বসে টাকা ইনকামের ৬ টি উপায় নিয়ে কথা বলবো। শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি জানতে পারবেন যে, কিভাবে ঘরে বসে ফাঁকা টাইমে কাজ করে টাকা ইনকাম করা সম্ভব।

আমরা সকলেই আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য টাকা ইনকামের বা অতিরিক্ত টাকা ইনকামের উপায় খুজে থাকি। আমরা কেউ এক্সট্রা কাজ করি। স্টুডেন্টরা বেশি টাকা ইনকামের জন্য আরো বেশি বাচ্চাদের টিউশন পাড়ানো শুরু করে। কিন্তু এতে কি অতিরিক্ত টাকা ইনকামের সমস্যার সমাধান হয়? হয়তো বা না।

6 Way Work From Home Earning Method

বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রতিদিন একটু সময় বের করে বেশ কিছু বিষয় জেনে সেগুলি নিয়ে কাজ শুরু করলে আমরা চাইলে সহজেই অতিরিক্ত টাকা ইনকাম করতে পারি। আজকের এই পোস্টে এমন ৬ টি উপায়ের কথা বলবো যেগুলি নিয়ে কাজ করলে আমরা আমাদের দরকারি টাকা ইনকাম করতে পারবো।

যদিও ঐ ছয়টি কাজ করেই যে আপনাকে টাকা ইনকাম করতে হবে তা না। এর মধ্যে যেটি আপনার পছন্দ বা যেটি নিয়ে আপনি কাজ করতে পারবেন সেটি নর্বাচন করে ঐ বিষয়ে শিখে নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন।

আর একটি গুরুত্বপূর্ন কথা আপনাকে জানিয়ে রাখি, এই ছয়টি বিষয় নিয়ে কাজ করতে চাইলে আপনাকে এগুলির বিষয়ে শিখে নিতে হবে। তারপর কাজ শুরু করে আপনি আপনার কাজের ভিত্তিতে ইনকাম পারবেন। আর ভবিষ্যতেও কাজ করতে চাইলে আপনাকে রেগুলার এগুলিতে সময় দিতে হবে। এমন সময় আসবে যখন মোটা টাকা এই কাজগুলি থেকে ইনকাম করতে পারবেন।

এইবার নিচে আমরা 6 টি এমন কাজের কথা বলবো যেগুলি প্রতিদিন দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় বের করে করলেই আপনি অতিরিক্ত টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

(1) মাইক্রো বিজনেস (Micro Business)

শুরুতে 5-7 হাজার টাকা ইনভেস্ট করে আপনি ছোটো আকারের ব্যাবসা বা মাইক্রো বিজনেস শুরু পারতে পারেন। যদি আপনি মনে করেন কোনো টাকা বা পুজি বিনিয়োগ বা ইনভেস্ট না করেই মাইক্রো কোনো ব্যবসা শুরু করবো তাও করতে পারবেন। এইবার আমরা দুটো জনপ্রিয় এবং বর্তমানে লাভদায়ক মাইক্রো বিজনেস সম্পর্কে জানাবো।

কনসাল্টেশন (Consultation)

আপনার যদি মানুষকে সাহায্য করার বা বোঝাবার ক্ষমতা থাকে তাহলে কনসাল্ট বা পরামর্শ দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারেন। আপনি যেই বিষয়ে বেশি জানেন বা বোঝেন সেই বিষয়ে মানুষদের পরামর্শ দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারেন।

ধরুন, আপনি জানেন কিভাবে সরকারি সরকারি ক্র্যাক করা যায়। তাহলে আপনি চাকরিপ্রার্থীদের সরকারি চাকরি ক্র্যাক করার পরামর্শ দিতে পারেন। তার জন্য আপনি একটা অঙ্কের টাকা চার্জ করবেন। আর এটার জন্য আপনাকে বাড়ির বাইরে যেতে হবে না। কিভাবে করবেন বলছি।

আপনি ফেসবুকে একটি পেজ এবং গ্রুপ খুলবেন। তাতে প্রতিদিন কোনো না পোস্ট পাবলিশ করবেন। পোস্ট গুলো অবশ্যই সরকারি চাকরি ক্র্যাক করার বিষয়ে হতে হবে। এক্ষেত্রে উদাহরন হিসেবে আমি সরকারি চাকরি ক্র্যাক করার বিষয়টাকে নিয়েছি। আপনি যেবিষয়ে পারদর্শী সেটা নিয়ে শুরু করবেন।

ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপে মেম্বার সংখ্যা বাড়তে থাকলে আপনি চাকরিপ্রার্থীদের পার্সোনালি কনসাল্ট বা পরামর্শ দেওয়ার জন্য পোষ্ট করা শুরু করবেন। সেখান থেকে যারা সত্যিই আগ্রহী তার আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। আর আপনি তাকে গুরুত্বপূর্ন পরামর্শ দিয়ে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নেবেন।

ক্লোথ ট্রেডিং (Cloth Trading)

ক্লোথ ট্রেডিং (Cloth Trading) করেও দিনের কিছু সময় বা সপ্তাহের একটি বা দুইটি দিন কাজ করে বাড়তি টাকা ইনকাম সম্ভব। এক্ষেত্রে বাড়ির কাছাকাছি পাইকারি কোনো কাপড়ের বাজার থেকে কাপড় খুচরো দোকান গুলিতে সরবরাহ করে দিতে হবে। মাঝখানে যে মার্জিন থাকবে সেটি লাভ হিসেবে আপনার পকেটে ঢুকবে।

আপনার বাড়ির কাছাকাছি কোনো পাইকারি কাপড়ের বাজার থাকলে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। না থাকলেও সমস্যা নেই। অন্য কোনো কাজও করতে পারবেন যেগুলি নিচে আমরা জানিয়েছি।

(2) ইন্স্যুরেন্স অ্যাডভাইজার (Insurance Advisor)

LIC সম্পর্কে কে না জানে। আশা করছি আপনিও জানেন। LIC ভারতের লোকেদের জীবনবীমা সহ অন্যান্য ইন্স্যুরেন্স পরিষেবা প্রদান করে থাকে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলের নেওয়া উচিত। শুধু LIC না অন্যান্য অনেক কোম্পানী ভারতে ইন্স্যুরেন্স বিক্রি করে।

অনলাইন এবং অফলাইনে দুই মাধ্যমেই এই কাজ হয়ে থাকে। আপনি চাইলে ইন্স্যুরেন্স অ্যাডভাইজার হিসবে কাজ করে মাসিক একটি ভালো ইনকাম করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে সারাদিন কাজ করার দরকার নেই দিনের কিছু একটা সময় কাজ করতে পারেন।

এক্ষেত্রে দারুন একটি বিষয় হচ্ছে, আপনি একবার একজনেক ইন্স্যুরেন্স বিক্রি করলেও তার জন্য প্রতি বছরেই একটি Reccuring ইনকাম করতে পারবেন। সহজ কথায় বললে, ঐ ব্যক্তির প্রতি বছরের প্রিমিয়ামের উপর একটা নির্দিষ্ট পারসেন্টেজ টাকা পাওয়া যাবে।

(3) ই-বুক বিক্রি (Ebook Selling)

ই-বুক বা Ebook বলতে PDF আকারে থাকা বইকে বোঝায়। আপনি যদি লিখতে ভালোবাসেন তাহলে ইবুক বানিয়ে তা অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে টাকা ইনভেস্ট করার কোন দরকার নেই। অ্যামাজন Kindle সহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে আপনার Ebook সাবমিট করে তা সহজেই বিক্রি করতে পারেন।

একবার যদি আপনার লেখা ইবুক চলতে শুরু করে বা বিক্রি হতে শুরু হয় তাহলে সেখান থেকে কত টাকা ইনকাম করতে পারেন তা আপনার ধারনার বাইরে।

(4) ক্লাউড রেস্টুরেন্ট (Cloud Restaurant)

ভয় পাবেন না। আপনাকে কোনো চেয়ার টেবিল ওয়ালা রেস্টুরেন্ট খুলতে হবে না। প্রথমে আপনাকে ক্লাউড রেস্টুরেন্ট কি তা জানিয়ে দিই।

নিজের বাড়িতে তৈরি করা খাবার অনলাইনের মাধ্যমে কাস্টোমার বা গ্রাহকদের কাছে পৌছে দেওয়ার নামই হল ক্লাউড রেস্টুরেন্ট। এখন প্রশ্ন হল কিভাবে খাবার বিক্রি করা সম্ভব তাও আবার বাড়ি থেকে।

Zomato, Swiggy ইত্যাদি খাবার অর্ডারিং কোম্পানির নাম আপনি শুনেছেন হয়তো। আপনি যদি ক্লাউড রেস্টুরেন্ট এর ব্যাবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমে Zomato বা Swiggy এর মতো খাবার অর্ডারিং অ্যাপে সেলার হিসেবে রেজিস্টার করতে হবে।

তাতে আপনার লিস্ট করা খাবার গুলো কোনো কাস্টোমার অর্ডার করলে সেগুলি বানিয়ে নির্দিষ্ট ঠিকানায় ডেলিভারি করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মুনাফা অনেক ভালো হয়।

(5) গ্রাফিক্স ডিজাইনিং (Graphics Designing)

বর্তমানের ইন্টারনেটের প্রগতির যুগে অনেকেই কন্টেন্ট তৈরির কাজে যুক্ত হচ্ছে। যেকারনে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর কাজও দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইউটিউব ভিডিও, ব্লগিং ইত্যাদির কাজের জন্য লোগো তৈরি, পোস্টার তৈরি করতে একজন দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনার প্রয়োজন হচ্ছে।

আমার কয়েকজন বন্ধুও গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর কাজ করে প্রতি মাসে ভালো একটা অঙ্কের টাকা ইনকাম করছে। আপনিও চাইলে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর কাজ শিখে টাকা ইনকাম শুরু করতে পারেন। আর একটি কথা, এই কাজ ভালো করে শিখে রাখলে আপনার কোনো দিন কাজের এবং টাকা পয়সার সমস্যা হবে না। কেননা ভবিষ্যতে এর চাহিদা আরো বাড়বে।

(6) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)

এমন অনেক লোক আছে যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা মাসে ইনকাম করে। সেই জায়গায় আপনি যদি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে প্রতি মাসে হাজারের ঘরে টাকা ইনকাম করতে পারেন তাহলে সমস্যা কিসের।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? যারা জানে না তাদের জানিয়ে রাখি, কোনো কোম্পানির প্রোডাক্ট বা দ্রব্য বিক্রি করে দেওয়া এবং প্রতি বিক্রির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমান (%) কমিশন হিসেবে টাকা ইনকামকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনি কত টাকা ইনকাম করতে পারবেন তা নির্ভর করে আপনি কোন কোম্পানির কি জিনিস বিক্রি করিয়ে দিচ্ছেন। Amzon, Flipkart, Rakuten Advertising, Clickbank সহ ইত্যাদি কোম্পানিগুলি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কে সাপোর্ট করে। এগুলোর অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করা যেতে পারে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে টাকা ইনকাম করার আগে আপনাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারে জেনে নিতে হবে। ইন্টারনেট থেকে ফ্রিতে জেনে নিয়ে পরে টাকা দিয়ে কোনো কোর্স কিনে তা থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সম্পর্কে সব কিছু জানতে পারবেন। ভালোভাবে না জেনে কয়েকদিন বা কয়েক মাস টাকা ইনকাম করতে পারলেও ভবিষ্যতে বেশিদিন আপনি কাজ চালাতে পারবেন না।

আরো একটি বিষয় না বললেই না, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর কাজ ভালোভাবে করতে হলে আপনাকে গুগল অ্যাড (Google Ad) এবং ফেসবুক অ্যাড (Facebook Ad) চালানো শিখতে হবে।

সবশেষে,

উপরে আলোচিত এই ৬ ধরনের কাজ গুলির মধ্যে যেকোনো একটি বা একাধিজ কাজ যেকোনো কাজ করার পাশাপাশি করা যেতেই পারে। আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো একটি কাজকে নির্বাচন করতে পারেন।

একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, যেই কাজটিই আপনি করেন না কেন সেবিষয়ে বিস্তারে জেনে নেবেন এবং রেগুলার করবেন। একটা সময়ে ঐ কাজে আপনি এক্সপার্ট হয়ে গেলে আপনার ইনকাম কি পরিমানে বেড়ে যাবে তা কল্পনা করা মুশকিল।

আশা করছি অতিরিক্ত টাকা ইনকাম করা নিয়ে লেখা আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। যদি সত্যিই তা হয় তাহলে আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করে দেবেন।

আর এই ধরনের টাকা ইনকাম করা সম্পর্কিত নতুন নতুন বিষয়ে জানতে আমাদের বাংলা রোজগার ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে ভুলবেন না।

Leave a Comment