অনলাইনে ব্লগিং করে টাকা ইনকাম | How to Start Blogging and Earn Money in Bengali 2021

বর্তমান সময়ে ব্লগিং একটি খুবই পরিচিত শব্দ। কিন্তু খুব কম লোকই এর অর্থ সম্পর্কে জানেন। বাস্তবে যখন আপনি কোন বিষয় সম্পর্কে লেখেন সেটিকে ব্লগে বলা হয়। এর মাধ্যমে আপনি আপনার জ্ঞান অন্য ব্যাক্তিদের সঙ্গে শেয়ার করেন।

গুগলে যখন কোন বিষয়ে আপনি সার্চ করেন তখন ওই বিষয়ের উত্তর আপনি পেয়ে যান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, গুগল কি সব প্রশ্নের উত্তর জানে? গুগলে কোন একটি প্রশ্ন সার্চ করলে দেখবেন কোনো না কোনো ওয়েবসাইট গুলি কে উত্তরের জন্য গুগলের সার্চ রেজাল্টে দেখানো হয়। আর ঐ সমস্ত ওয়েবসাইট বা ব্লগ গুলি আপনার আমার মতো লোকজনেরাই লিখে থাকে এবং গুগলে ইনডেক্স করে।

How to Start Blogging and Earn Money in Bengali 2021

How to Start Blogging & Earn Money in Bengali 2021

এখন আপনার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন জাগতে পারে। যেমন ব্লগিং বিজনেস কিভাবে শুরু করা যায়? ব্লগিং থেকে কত টাকা ইনকাম হতে পারে? এই কাজ শুরু করার জন্য কত টাকা ইনভেস্ট করতে হবে? একদিনে কটা আর্টিকেল লিখতে হবে ইত্যাদি। আজকে এই সমস্ত প্রশ্নগুলির উত্তর আপনি পাবেন।

ব্লগিং করার লাভ

যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো ভালো মানের টাকা ইনকাম করা। যদি আপনি ব্লগিং-এর কাজকে পেশা হিসেবে নির্বাচন করেন তাহলে টাকা ইনকামের পাশাপাশি আরো অনেক লাভ হতে পারে যেমন-

  • লিখন দক্ষতা বৃদ্ধি- যদি আপনি লিখতে ভালোবাসেন তাহলে এই কাজ বা ব্যবসা আপনার জন্য। ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত নতুন কোন বিষয় সম্পর্কে লিখতে হবে। এই লেখার জন্য আপনার লিখন দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, নতুন প্রতিভার জাগরণ ঘটবে এবং কল্পনা শক্তি বিকশিত হবে।
  • জ্ঞান বৃদ্ধি- যখনই আপনি নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে লিখতে শুরু করবেন তখন সেই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য রিসার্চ করবেন, ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করবেন যার ফলে আপনার জ্ঞানের বৃদ্ধি হবে।
  • কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা- যদি আপনি কোন অফিসে কাজ করেন তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এবং আপনার বসের কথামতো আপনাকে কাজ করতে হবে। কিন্তু ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো সময়ে আপনি নিজের কাজ নিজেই ইচ্ছামত করতে পারেন।
  • সৃজনশীলতা বৃদ্ধি- ব্লগিং আপনার নিজস্ব পছন্দের কাজ। এই কাজের জন্য আপনি নতুন নতুন চিন্তা করবেন যার কারনে আপনার সৃজনশীলতা বাড়বে এবং সৃজনশীলতায় আপনাকে সফল করে তুলবে।
  • টাকা ইনকাম করা শিখবেন- অধিকাংশ লোক তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী একটি ব্লগ তৈরি করে মানুষের সামনে তুলে ধরে। তারপর তাদের যখন অভিজ্ঞতা বেড়ে যায় তখন তারা অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও লিখতে এবং ব্লগ বানাতে শুরু করে। আপনার প্রধান ব্লগ থেকে আপনি বেশ কিছু জিনিস শিখবেন- যেমন কি করা দরকার, কি করা দরকার নয়, মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কেমন হওয়া দরকার ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো আপনি ভালোভাবে বুঝতে ও শিখতে পারবেন যা আপনাকে মোটা টাকা ইনকাম করার সুযোগ করে দেবে।

ফ্রিতে ব্লগ বা ওয়েবসাইট বানানোর উপায়

আজকের সময়ে ব্লগ বা ওয়েবসাইট বানানোর জন্য বিভিন্ন প্লাটফর্ম রয়েছে যেমন ওয়ার্ডপ্রেস, ব্লগার, টাম্বলর সেলফ হোস্টেড ওয়ার্ডপ্রেস ইত্যাদি। এর মধ্যে যেকোনো একটি প্ল্যাটফর্ম কে ব্যবহার করে আপনি ফ্রিতে ব্লগ বানাতে পারেন। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্লগ বানানোর সময় আপনার সাইটের নামের সঙ্গে ওই কোম্পানির ডোমেন নাম যুক্ত হয়ে যাবে। যদি আপনি আপনার নিজস্ব মত অনুযায়ী ডোমেইন নাম নিতে চান তাহলে আপনাকে অল্প কিছু টাকা খরচ করতে হবে।

সবথেকে ভালো ব্লগিং প্লাটফর্ম

এখন ওয়ার্ডপ্রেসে বেশিরভাগ ওয়েবসাইট তৈরি করা হচ্ছে। এর কারণ হলো ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করা সব থেকে সহজ তাছাড়া। এতে সুন্দর সুন্দর থিম ইনস্টল করে ওয়েবসাইটের লুক ভালো করা যায়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো প্লাগ ইন ইন্সটল করেই এক ক্লিকেই করা যায়। তাই আপনি ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে ব্লগ বা ওয়েবসাইট বানাতে পারেন।

ব্লগ বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস

ব্লগ বা ওয়েবসাইট বানাতে আপনার দুটো জিনিস প্রয়োজন হবে একটি হচ্ছে ডোমেইন আরেকটি হচ্ছে হোস্টিং। ডোমেইন ও হোস্টিং এর জন্য আপনাকে কিছু টাকা খরচ করতে হবে। যদি আপনি কোন টাকা খরচ না করেই ওয়েবসাইট বানাতে চান তাহলে গুগলের blogger.com এর মাধ্যমে সহজেই ওয়েবসাইট বানাতে পারেন।

ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন

ওয়েবসাইট বানানোর জন্য প্রথমে আপনাকে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ডোমেন অর্থাৎ আপনি আপনার ওয়েবসাইটের যে নাম রাখবেন সেটি আপনাকে রেজিস্ট্রেশন অর্থাৎ কিনতে হবে। যেমন www.banglarojgar.com হচ্ছে একটি ডোমেইন। আপনি আপনার টপিক অনুযায়ী ডোমেইন নির্বাচন করবেন। যাতে ডোমেইন নাম দেখেই আপনি কোন বিষয়ে লেখালেখি করছেন সেটি বোঝা যায়। ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করার জন্য অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানে আপনি ডোমেইন কিনতে অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন পারেন।

হোস্টিং

ব্লগ বা ওয়েবসাইট বানানোর জন্য আপনার ভালো ওয়েব হোস্টিং এর প্রয়োজন। হোস্টিং বলতে আপনার ডোমেইন এড্রেসটি যে সার্ভারে সঙ্গে যুক্ত থাকবে তাকে বলা হচ্ছে ওয়েব হোস্টিং। হোস্টিংকে স্টোরেজের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। হোস্টিং কেনার সময় বেশ কিছু বিষয়ের উপরে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন- এমন কোন ওয়েব হোস্টিং নিতে হবে যাতে আপনার ডাটা বা তথ্য সুরক্ষিত থাকে, সার্ভারের স্পিড ভালো হয়।  তাছাড়া খুব সহজেই ব্যবহার করা যায় এমন কোন ওয়েব হোস্টিং নিতে হবে।

ব্লগিং করতে কত টাকা প্রয়োজন

ব্লগিং বা ব্লগিং বিজনেস শুরু করার জন্য কত টাকা খরচ হতে পারে তার একটা আনুমানিক পরিমাণ নিচে জানানো হলো-

  • প্রথমে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করার জন্য 200 টাকা থেকে 1000 টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
  • এরপর ভালো একটি হোস্টিং কিনতে হবে। এর জন্য প্রতি মাসে 400 থেকে 500 টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। অর্থাৎ এক বছরের জন্য চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা হোস্টিং কিনতে খরচ হতে পারে।
  • যদি আপনি আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইন সুন্দর করতে চান তাহলে আলাদা করে থিম কিনতে পারেন। আর এর জন্য আপনাকে তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ করতে হবে। যদিও আপনি ফ্রী থেমে কাজ চালাতে পারেন।
  • সব মিলিয়ে একটি ব্লগ শুরু করার জন্য মোটামুটি 7 হাজার থেকে 11 হাজার টাকা খরচ করতে হতে পারে।

ব্লগিং থেকে টাকা ইনকামের উপায়

ব্লগিং বা ওয়েবসাইট থেকে আপনি বিভিন্নভাবে টাকা ইনকাম করতে পারেন। ব্লগিং থেকে টাকা ইনকামের সবথেকে সহজ এবং জনপ্রিয় উপায় হল গুগল এডসেন্স। তাছাড়া স্পনসর, গেস্ট পোস্ট, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ইত্যাদির মাধ্যমেও খুব সহজে টাকা ইনকাম করা যায়।

ব্লগিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় 

যেকোনো কাজের জন্যই আপনার মধ্যে কোন কোন প্রয়োজনীয় দক্ষতার প্রয়োজন হয়। ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে কোন কোন দক্ষতার প্রয়োজন একটু জেনে নিন

  • ধৈর্য এবং আত্মবিশ্বাস- যদিও এগুলো তেমন কোনো দক্ষতা নয় কিন্তু ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে ধৈর্য এবং আত্মবিশ্বাস খুবই প্রয়োজন। যখন কোন একটি ব্লগিং ওয়েবসাইট তৈরি করা হয় তখন তার রেজাল্ট ফলাফল পেতে 6 থেকে প্রায় 1 বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই এই কাজের জন্য আপনাকে ধৈর্য এবং আত্মবিশ্বাস বজায় রেখে কাজ করতে। ঠিকমতো কাজ করলে খুব তাড়াতাড়ি এ থেকে মোটা টাকা ঢোকাতে ঢোকাতে পারেন।
  • লিখন দক্ষতা- ব্লগিংয়ের জন্য সবথেকে যে দক্ষতার প্রয়োজন বেশি সেটা হল লিখন দক্ষতা। কেননা ব্লগিং হল লেখালেখি করার ব্যবসা। আপনি যে বিষয়ে লিখবেন সেটি ভালো ভাবে গুছিয়ে এবং বুঝিয়ে লিখতে হবে। এক্ষেত্রে সবসময় সহজ সরল শব্দ ব্যবহার করতে হয়। আর যদি আপনি লিখতে না ভালোবাসেন তাহলে এই কাজ আপনার জন্য নয়। তবে লিখন দক্ষতা তৈরি করে আপনি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।
  • ফটো এডিটিং- যদি আপনি আপনার ব্লগে লেখালেখির সঙ্গে ছবি যুক্ত করেন তাহলে আপনার ব্লগ আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তাছাড়া বেশ কিছু বিষয়কে ছবির মাধ্যমে সহজেই ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়। ব্লগে যদি ভালো ছবি দেওয়া যায় তাহলে ভিজিটররা খুব সহজে আকর্ষিত হয় এবং আপনার ব্লগ জনপ্রিয়তা লাভ করে। মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে সহজেই ফটো এডিটিং করা যায়।
  • মার্কেটিং- যে কোন ব্যবসার জন্য মার্কেটিং স্কিল এর প্রয়োজন হয়। ব্লগিং একপ্রকার ব্যবসা তাই এর জন্য মার্কেটিং এর দরকার। এক্ষেত্রে অনলাইন মার্কেটিং প্রয়োজন। যদি কোন ব্লগারের মধ্যে মার্কেটিংয়ের স্কিল থাকে তাহলে সে তার ব্লগকে অধিক সংখ্যক  মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারে। এতে টাকা ইনকামের পরিমাণ বেড়ে যায়।
  • SEO- এর সম্পূর্ণ নাম হচ্ছে ‘সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন’। ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে এটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। SEO এর মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে গুগলের সার্চ রেজাল্টে সবথেকে উপরে দেখাতে পারেন। SEO শেখার জন্য ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখতে পারেন। খুব সহজেই এটি শেখা যায়।
  • পেশাদার ও ব্লগারদের ফলো করুন- ব্লগিংয়ের বিষয়ে নিজেকে সবসময় আপডেট রাখার জন্য বিভিন্ন শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল গুলি কে ফলো করতে পারেন। এতে আপনার ব্লগিং সম্পর্কে জ্ঞান বাড়বে এবং নতুন নতুন বিষয় আপনি জানতে পারবেন।

যদি আপনি লিখতে ভালোবাসেন তাহলে ব্লগিং এর কাজ বা ব্যবসা আপনার জন্য উপযুক্ত হবে। এর জন্য একটি কথা মাথায় রাখতে হবে ব্লগিং শুরু করার পর নিয়মিত আপনাকে আপনার ব্লগ সাইটে নির্দিষ্ট বিষয়ে লিখতে হবে। সেইসঙ্গে নতুন নতুন জিনিস শেখার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। দিনের  বেশ কয়েক ঘন্টা ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সামনে অতিবাহিত করতে হবে। আর এই সমস্ত বিষয়গুলি যদি আপনি করতে পারেন তাহলে ব্লগিং আপনার জন্য এবং এ থেকে আপনি ভালো টাকা ইনকাম করতে চলেছেন।