শুধুমাত্র সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া কি ঠিক?

বর্তমান সময়ে শুধুমাত্র সরকারি চাকরির জন্যই কি প্রস্তুতি নেওয়া ঠিক? এখনকার শিক্ষার্থীদের কাছে এমন প্রশ্ন প্রায়শই শোনা যায়। আজকের এই পোস্টে আমরা সরকারি চাকরি ভালো না খারাপ সে বিষয়ে আলোচনা করবো না। বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যারিয়ার গঠনে শুধুমাত্র সরকারি চাকরির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যেখানে আজকের দিনে বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজের দারুণ সুযোগ রয়েছে।

আজকের এই লেখাটি তাদের জন্য যারা শুধুমাত্র সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারি চাকরিতে শূন্যপদ খুবই কম থাকে চাকরি পাওয়া কঠিন এমন কথা বলা একদম ঠিক না। কেননা সরকারের যা প্রয়োজন ঠিক সেই পরিমাণ শূন্যপদ বের করবেই। এই শূন্যপদের পরিমাণ কেউ জোর করে বাড়াতে পারবে না। তাহলে এখন উপায় কি? কিভাবে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া যায় বা কিভাবে সরকারি চাকরি পাওয়া যায়?

আমাদের উদ্দেশ্য সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া প্রার্থীদের Demotivate করা নয়। কেননা কারো যদি কোনো সরকারি চাকরি করার প্রবল ইচ্ছা থাকে তাহলে সে পরিশ্রম করে অবশ্যই একটি পদ নিজের নামে করে নেবে। আমরা আজকে সেই সমস্ত প্রার্থীদের বিষয়ে কথা বলব যারা বছরের পর বছর শুধুমাত্র সরকারি চাকরির প্রস্তুতির জন্য সময় দিচ্ছে বা সময় নষ্ট করছে।

Shudhumatro Sarkari Chakrir Prostuti Neoya Ki Thik

সরকারি চাকরির প্রস্তুতিতে সমস্যা

বর্তমান সময়ে সরকারি চাকরির প্রস্তুতিতে চাকরিপ্রার্থীদের বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। যেগুলি নিচে আলোচনা করছি-

(১) শিক্ষাগত যোগ্যতা- সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন চাকরির জন্য বিভিন্ন যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ চাকরিতে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার মাধ্যমে নিয়োগ করা হয় আর বেশ কিছু সরাসরি ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতার নম্বরের ভিত্তিতে। আর এই ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। ধরা যাক আজকে যার বয়স 35 বছর সে অনেক কয়েক বছর আগে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যার বয়স 18 থেকে 25 বছর। সে কয়েক বছর আগে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। এক্ষেত্রে কম বয়সী চাকরিপ্রার্থী প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে।

(২) বয়স- সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়স অনেক ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পশ্চিমবঙ্গে এই সমস্যা আরো বেশি। কেননা স্কুল সার্ভিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রায় বন্ধের দিকে বা খুবই কম। তাই অনেকে সরকারি চাকরির চেষ্টা করতে করতে এখন তাদের বয়স শেষের দিকে। এই বিষয়টা থেকে যাদের কম বয়স তাদের শিক্ষা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

(৩) খরচ- এক্ষেত্রে আমরা WBCS, UPSC, ব্যাংক, রেলওয়ে সহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির কথা বলব। বিভিন্ন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি করার জন্য বই থেকে শুরু করে টিউশন খরচ ইত্যাদিতে প্রতিমাসে 5000 থেকে 8000 টাকা খরচ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ব্যক্তি এবং স্থান বিশেষে খরচ ভিন্ন হয়ে থাকে। আর যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ তাদের পক্ষে এই খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং তারা প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে যায়।

বর্তমানের জনপ্রিয় কিছু সরকারি চাকরি

রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের বেশ কিছু চাকরি রয়েছে যেগুলিতে প্রতি বছর রেগুলার ভ্যাকান্সি বের হয়। সেই সমস্ত চাকরিগুলি হল-

  • WBCS
  • WBP Constable & SI
  • Railway
  • SSC MTS, CHSL, CGL
  • UPSC ইত্যাদি

তাহলে চাকরি পাওয়ার সঠিক উপায় কি?

তাহলে এখন চাকরি বা কাজ পাওয়ার উপায় কি, আমরা কি তাহলে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি ছেড়ে দেবো? এই প্রশ্নের উত্তর একদম না। চাকরির প্রস্তুতির পাশাপাশি কয়েকটি স্কিল শিখে নিতে হবে এবং যে কোনো কোম্পানির কাজে অথবা কোন কোম্পানির ইন্টার্নশিপ হিসেবে কাজ শুরু করতে হবে। এতে একদিকে যেমন চাকরির প্রস্তুতি চলবে তেমনি ইনকাম হবে। আর যদি ওই স্কিল সম্পর্কিত কাজকে ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছা থাকে তাহলে সেটি আরো ভালো করে শিখে নিতে হবে।

এইবার বেশকিছু চাকরি এবং স্কিল সম্পর্কে আপনাকে জানাবো যেগুলি শিখে নিলে কম প্রতিযোগিতায় খুব সহজেই চাকরি বা কাজ পাওয়া সম্ভব-

প্রাইভেট জব (Private Job)

বর্তমান সময়ে প্রাইভেট জব অর্থাৎ বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও দারুণ সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কেউ যদি চাই কোনো বেসরকারি চাকরির মাধ্যমেও সে উচ্চ পদাধিকারী হতে পারে। এখন প্রাইভেট চাকরি বা বেসরকারি চাকরি খোঁজা খুবই সহজ। বর্তমানে বিভিন্ন জনপ্রিয় অ্যাপ রয়েছে যেগুলো আপনার যোগ্যতা এবং স্কিল অনুযায়ী আপনাকে চাকরি খুঁজে দেবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো APNA অ্যাপ। প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারবেন।

ডিজিটাল অ্যাড (Digital Ad)

ফেসবুক অ্যাড, গুগল অ্যাড চালানো জানলে আপনি ঘরে বসেই জব পেতে পারেন। যারা মনে করেন বাড়িতে থেকেই কাজ ও ইনকাম চলবে এবং সেইসঙ্গে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি চালু থাকবে তাদের জন্য এই স্কিলটি বিশেষ উপযোগী হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে নিজস্ব ইচ্ছা এবং ও পারদর্শিতা অনুযায়ী কাজ বেছে নিতে হবে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphics Design)

সত্যি বলতে কি আমরা এমন সময়ে অবস্থান করছি যেখানে সুযোগই সুযোগ। এখনকার দিনে ভিডিও এবং ব্লগের ক্ষেত্রে কনটেন্ট ক্রিয়েটারদের বিভিন্ন গ্রাফিক ডিজাইনারদের প্রয়োজন হয়। যারা তাদেরকে তাদের কাজের উপযোগী গ্রাফিক ডিজাইন এর মাধ্যমে ছবি বানিয়ে দেয়। তাই এখনকার দিনে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের চাহিদা তুঙ্গে। আর এই দক্ষতা অর্জন করতে পারলেই কাজের অভাব হবেনা।

ফটোগ্রাফি (Photography)

ফটোগ্রাফি এমন একটি স্কিল যেখানে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়। তবে এর জন্য সঠিকভাবে ফটোগ্রাফি স্কিল শিখতে হবে। এই স্কিল শেখার জন্য নিজেকে অনেকটা সময় দিতে হবে। আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন সরকারি চাকরির প্রস্তুতিতে অনেকের 3 বছর অথবা 4 বছর লেগে যায়। কিন্তু কিছুটা সময় ফটোগ্রাফিতে দিয়ে ফটোগ্রাফি দক্ষতা অর্জন করতে পারলেও ক্ষতি কি। তাই এই দক্ষতা অর্জন করতে পারলেই চাকরির প্রস্তুতির পাশাপাশি এর থেকেও ভালো টাকা ইনকাম করা সম্ভব হবে।

ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট (Website and App Development)

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট কাজের। কেননা বর্তমানে আমাদের দেশ এখন উদ্যোক্তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং বিভিন্ন নতুন নতুন স্টার্টআপ ও ব্যবসা শুরু হচ্ছে। সকল উদ্যোক্তা এবং স্টার্টআপ এর ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর প্রয়োজন হয়। তারা মোটা টাকা দিয়ে ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করিয়ে থাকে। তাই এই কাজটি যদি কেউ আয়ত্ত করতে পারে তাহলে বাড়িতে বসেই টাকায় পকেট ভর্তি করে ফেলতে পারবে।

রিয়াল এস্টেট জব (Real Estate Job)

বিশেষ করে শহরে অঞ্চলে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বেশি লক্ষ্য করা যায়। রিয়াল এস্টেট বলতে জমি জয়গা এবং ফ্ল্যাট ক্রয় বিক্রির ব্যবসা কে বোঝানো হয়। আর এই রিয়েল এস্টেট কাজের সেলস এক্সিকিউটিভ হিসাবে কাজ পাওয়া যায়। তবে এই কাজের ব্রোকার হওয়ার জন্য ভালো কমিউনিকেশন স্কিল থাকতে হবে অর্থাৎ ভালো কথা বলতে পারতে হবে।

মার্কেটিং (Marketing)

মার্কেটিং জব বলতে এখানে ডিজিটাল মার্কেটিং জবকে বোঝানো হচ্ছে। এখন ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগ। যে কোনো ব্যবসা এখন অনলাইনে চালানো হচ্ছে। আর এই ব্যবসা চালানোর জন্য মার্কেটিং অত্যন্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কাজ করতে হলে ফেসবুক মার্কেটিং এবং ডিজিটাল বিষয়ের জ্ঞান দরকার হয়। সেই সঙ্গে ভালো কমিউনিকেশন স্কিল, ইমেইল রাইটিং স্কিল, ডিজিটাল এবং ইংরেজি বিষয়ে পারদর্শী হওয়া দরকার।

ভিডিও এডিটর (Video Editor)

ইউটিউব থেকে শুরু করে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতিতে ভিডিও আপলোড দিন দিন বাড়ছে। লোকজন এখন অনলাইনে বেশি বেশি ভিডিও দেখা পছন্দ করছেন। সেই সাথে সাথে ভিডিও ইনফ্লুয়েন্সার, ভিডিও মেকারদের সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। ভিডিও বানানোর পর দরকারি কাজ হল ভিডিও এডিট করা। কেননা একটা ভিডিও বানানোর পর সেটিকে দর্শকদের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য ভিডিও এডিট করা একান্ত দরকার। তাই ভিডিও এডিটরের কাজ শিখতে পারলে কাজ পেতে অসুবিধা হবে না। সেইসাথে ইনকাম হবে লাগামছাড়া। ভিডিও এডিটর এর জন্য সফটওয়্যার এর ভালো জ্ঞান থাকা দরকার। এক্ষেত্রে মোবাইল এবং কম্পিউটার দুটির মধ্যে যেকোনো একটিতেই ভিডিও এডিটরের কাজ শেখা যায়।

নিজের ব্যবসা শুরু করুন (Start Your Own Business)

মানছি ইচ্ছা অনুযায়ী চাকরির প্রস্তুতি করা দরকার। কিন্তু কেউ যদি 3 থেকে 4 বছর ধরে চাকরির প্রস্তুতি করার পরও কোনো সরকারি চাকরি না পায় তাহলে তাকে চাকরির প্রস্তুতির পাশাপাশি কোন একটি ব্যবসা শুরু করা দরকার। এখন যে কেউ উদ্যোক্তা হয়ে নিজের ব্যাবসা শুরু করতে পারে। আপনিও একজন উদ্যোক্তা হতে পারেন, নিজের ব্যবসা শুরু করতেই পারেন এবং নিজেকে অনেক অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। বর্তমান সময়ে রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার উভয়ই উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করছে। বর্তমান যুবকদের চাকরির জন্য নয় চাকরি দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে বলা হচ্ছে।

আজকে আপনি কি জানলেন

প্রিয় বন্ধু, আজকে আপনি জানলেন শুধুমাত্র সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া কি ঠিক হবে, এই বিষয়ে। আশা করছি আপনি আজকে নতুন এবং ভালো কিছু জানতে পেরেছেন। আমার বিশ্বাস উপরে দেওয়া সমস্ত তথ্য গুলি আপনার পছন্দ হয়েছে। আগামী দিনে আরো নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানতে ও শিখতে চাইলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। আমরা অনলাইন ইনকাম, ক্যারিয়ার, রোজগারের উপায়, ব্যাবসার আইডিয়া প্রভৃতি সম্পর্কে জানিয়ে থাকি একদম সহজ বাংলা ভাষায়।

এগুলোও পড়ুন-